আপনি কি ব্লেন্ডার পরিষ্কার করতে করতে বিরক্ত? রান্না শেষ হওয়ার পর জার, ব্লেড আর ঢাকনার ময়লা পরিষ্কার করতে অনেক সময় লাগে। পেঁয়াজ, রসুন বা মশলার গন্ধও সহজে যায় না। তবে বেশিরভাগ সমস্যা আসে ভুল পদ্ধতিতে পরিষ্কার করার কারণে।
তাই, এই গাইডে আমি দেখাবো কীভাবে কিছু সহজ এবং কার্যকর হ্যাক ব্যবহার করে আপনার ব্লেন্ডারকে প্রতিদিনের মতো একদম ঝকঝকে রাখা যায়। জার, ব্লেড, গন্ধ, দাগ-সবকিছু দ্রুত এবং ঘরোয়া উপায়ে পরিষ্কার করা সম্ভব। আপনি প্লাস্টিক জার ব্যবহার করুন বা গ্লাস, সব মডেলের জন্যই এখানে ব্যবহারযোগ্য টিপস দেওয়া হলো।
ব্লেন্ডার পরিষ্কার রাখার সবচেয়ে সহজ হ্যাকগুলো
আপনার ব্লেন্ডারকে ঝকঝকে রাখাটা এতটা কঠিন নয় যেটা মনে হয়। নিচে আমরা ধাপে ধাপে দেখাচ্ছি কিভাবে সহজ উপায়ে ব্লেন্ডার পরিষ্কার রাখা যায়।
ডিশওয়াশার নেই? অটো-ক্লিন মেথডই যথেষ্ট
ডিশওয়াশার না থাকলেও চিন্তা নেই। ব্লেন্ডার নিজেই নিজের মতো করে পরিষ্কার করা যায় অটো-ক্লিন মেথডের মাধ্যমে। এটি দ্রুত, সহজ, এবং সব ধরনের জারের জন্য কার্যকর।
কীভাবে করবেন:
- জারের মধ্যে গরম পানি ভরুন (প্রায় অর্ধেক)।
- কয়েক ফোঁটা লিকুইড ডিটারজেন্ট যোগ করুন।
- ঢাকনা বন্ধ করে ১৫–২০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন।
- পানি ফেলে দিন, শুকিয়ে রাখুন।
টিপ: বেশি জেদি দাগ থাকলে আগে বেকিং সোডা বা লেবুর রস দিয়ে হালকা ব্লেন্ড করে নিন।
ব্লেডে জমে থাকা জেদি দাগ দূর করতে বেকিং সোডা

ব্লেন্ডারের ব্লেডে সময়ের সাথে দাগ বা গন্ধ জমে যেতে পারে, বিশেষ করে টমেটো বা মশলা ব্যবহারের পরে। কিন্তু খুব সহজ উপায়ে এটাও দূর করা যায়।
কীভাবে করবেন:
- জারে পানি ভরে ১ চামচ বেকিং সোডা মেশান।
- ব্লেন্ডার ৩০ সেকেন্ড চালান।
- পানি ফেলে জার শুকিয়ে রাখুন।
পেঁয়াজ/রসুন বাটার পর গন্ধ দূর করার উপায়
পেঁয়াজ বা রসুন ব্যবহার করার পরে জারের ভিতরে গন্ধ ধরা পড়ে অনেকেরই সমস্যা। তবে কয়েকটি ঘরোয়া হ্যাক দিয়ে সহজেই গন্ধ দূর করা যায়।
কীভাবে করবেন:
- লেবুর রস: জারে লেবুর রস ছিটিয়ে ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন। (প্রায় ১–২ চামচ যথেষ্ট হবে)
- ভিনেগার: ১–২ চামচ ভিনেগার দিয়ে হালকা পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন।
- ব্লেন্ড করা খবরের কাগজ: হ্যাঁ, পুরোনো খবরের কাগজও কাজে আসে! জার ভিজিয়ে ব্লেড দিয়ে হালকা ব্লেন্ড করুন, গন্ধ দ্রুত চলে যাবে। (প্রায় ১–২ পাতার ব্লেন্ডিং যথে)
প্লাস্টিক জারের হলদে দাগ দূর করার ট্রিক
প্লাস্টিক জারে টমেটো বা হলুদরঙের খাবার রাখলে দাগ হয়ে যায়। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, ঘরোয়া উপায়ে সহজেই দাগ দূর করা যায়।
আপনার যা লাগবে:
- বেকিং সোডা পেস্ট (১ চা চামচ বেকিং সোডা + কয়েক ফোঁটা পানি)
- লেবুর রস বা টমেটোর রস
- সূর্যের আলো
কীভাবে করবেন:
- জারের ভিতরে বেকিং সোডা পেস্ট লাগান।
- এরপর লেবুর রস বা টমেটোর রস যোগ করুন।
- জারটি হালকা ঘষে ৫ মিনিট রাখুন।
- তারপর সূর্যের আলোতে ১০–১৫ মিনিট রেখে দিন।
- সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
গ্লাস জার পরিষ্কারের সেফ মেথড

গ্লাস জারে সাধারণত দাগ কম ধরে, কিন্তু ভুলভাবে ধুলে স্ক্র্যাচ বা ক্ষতি হতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে পরিষ্কার করা জরুরি।
আপনার যা লাগবে:
- গরম পানি
- নরম স্পঞ্জ বা ব্রাশ
- সাধারণ ডিটারজেন্ট
কীভাবে করবেন:
- জারের ভিতরে গরম পানি + কয়েক ফোঁটা ডিটারজেন্ট দিন।
- নরম স্পঞ্জ দিয়ে জারটি হালকাভাবে ঘষুন।
- ব্লেডে স্টিল উল ব্যবহার করবেন না, এতে ব্লেড ক্ষয় হতে পারে।
- সব কিছু ধুয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে রিন্স করুন।
- পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
ব্লেডে মরিচা উঠলে দ্রুত সমাধান
ব্লেডে মরিচা লাগলে ব্লেন্ডারের পারফরম্যান্স কমে যায়, আর দেখতেও খারাপ লাগে। সহজ কিছু ঘরোয়া উপায়ে এটি দ্রুত ঠিক করা সম্ভব।
আপনার যা লাগবে:
- ভিনেগার প্রায় ৩–৪ চামচ (প্রায় ৫০–৬০ মিলি) (সাদা ভিনেগার ভালো কাজ করে)
- লবণ (১ চা চামচ)
কীভাবে করবেন:
- একটি বাটিতে ভিনেগার এবং লবণ মিশিয়ে ব্লেড ঢাকুন।
- প্রায় ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- তারপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঢাকনা ও রাবার গ্যাসকেট পরিষ্কার করার কৌশল
ব্লেন্ডারের ঢাকনা এবং রাবার গ্যাসকেট অনেক সময় নোংরা হয়, বিশেষ করে রান্নার মসলার সঙ্গে। এগুলো ঠিকভাবে না পরিষ্কার করলে ছত্রাক বা দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। সহজ কৌশলগুলো হলো:
- ছোট ব্রাশ ব্যবহার করুন: পুরানো টুথব্রাশ বা ছোট বোতল ব্রাশ দিয়ে ঢাকনা ও গ্যাসকেটের সব কোণ পরিষ্কার করুন।
- গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন: ৫–১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ময়লা নরম হয়ে সহজে দূর হয়।
- পুরোপুরি শুকিয়ে নিন: পরিষ্কার করার পর ঢাকনা ও গ্যাসকেট সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিন। এটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাস প্রতিরোধে জরুরি।
এই কৌশলগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ব্লেন্ডারের ঢাকনা ও রাবার অংশ দীর্ঘসময় টিকে থাকবে এবং দুর্গন্ধও থাকবে না।
এই হ্যাকগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে জারের হলদে দাগ, দুর্গন্ধ, এবং খাদ্যাবশেষ সহজেই দূর হবে।
ব্লেন্ডার পরিষ্কারের সময় যেসব ভুল করা যাবে না
ব্লেন্ডার পরিষ্কার করা সহজ মনে হলেও কিছু ভুল করলে তা ব্লেন্ডারের ক্ষতি করতে পারে। নিচে সেই সাধারণ ভুলগুলো তুলে ধরা হলো, যা এড়িয়ে চললে আপনার ব্লেন্ডার দীর্ঘস্থায়ী হবে।
১. ফুটন্ত পানি ঢালবেন না
অনেকেই ব্লেন্ডার খুব দ্রুত গরম করার জন্য জারে সরাসরি ফুটন্ত পানি ঢেলে দেন। এটা প্লাস্টিক বা গ্লাস জারের ফাটার কারণ হতে পারে। বরং গরম কিন্তু ফুটন্ত নয় এমন পানি ব্যবহার করুন, তারপর ধীরে ধীরে ধুয়ে নিন।
২. ব্লেডে সরাসরি স্টিল উল ব্যবহার
স্টিল উল বা abrasive scrubbers ব্লেডের ধাতু ক্ষয় করে দেয়। এতে ব্লেডের ধার কমে যায় এবং মরিচা বা দাগ দ্রুত ধরে বসে। ব্লেড পরিষ্কারের জন্য নরম স্পঞ্জ বা ব্রাশ ব্যবহার করুন।
৩. মোটর বেস ভিজানো
মোটর বেস বা ইলেকট্রিক্যাল অংশ ভিজালে তা শর্ট সার্কিট করতে পারে। মোটরের অংশ শুধু শুকনো বা হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
৪. জোরে জোরে স্ক্রাব করা
ব্লেড বা ঢাকনা জোরে ঘষলে ক্র্যাক বা স্ক্র্যাচ পড়তে পারে। দাগ বা গন্ধ থাকলে ডিটারজেন্ট এবং গরম পানি দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন, তারপর হালকা স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
আরও জানতে পড়ুন: ব্লেন্ডার বেশি শব্দ করলে কিভাবে কমাবেন?
Maintenance টিপস — ব্লেন্ডার দীর্ঘস্থায়ী করার উপায়

একটা ভালো ব্লেন্ডার কেবল বাছাই করলেই হবে না, নিয়মিত যত্ন নিতেও হবে। নিচের সহজ কিন্তু কার্যকর টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার ব্লেন্ডার অনেক দিন টিকবে এবং সবসময় সঠিক পারফরম্যান্স দেবে।
১. ব্যবহারের পরপর পরিষ্কার করুন
প্রতিবার ব্যবহারের পর জার, ব্লেড, ঢাকনা দ্রুত ধুয়ে নিন। বিশেষ করে মশলা, রসুন বা পেঁয়াজ ব্যবহার করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করুন, যাতে দাগ ও গন্ধ ধরে না থাকে।
২. জার গ্যাসকেট (rubber seal) দেখাশোনা করুন
গ্যাসকেট সময়ের সাথে নরম বা ফেটে যেতে পারে। মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজন হলে রিপ্লেস করুন, যাতে লিক না করে।
৩. মোটরকে বিশ্রাম দিন
একবারে একাধিক ব্যাচ ব্লেন্ড করলে মোটর গরম হয়ে যেতে পারে। ১ মিনিট ব্লেন্ড → থামুন → আবার চালান পদ্ধতি ব্যবহার করুন। দীর্ঘ সময় একবারে ব্লেন্ড করা মোটরের জন্য ক্ষতিকর।
৪. ওভারলোড করবেন না
জারকে পুরোপুরি ভর্তি না করে অল্প জায়গা রেখে খাবার দিন। অতিরিক্ত লোড দিলে ব্লেড ধীরগতিতে ঘোরে এবং মোটরের উপর চাপ পড়ে।
৫. ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার বিবেচনা করুন
যদি আপনার এলাকায় লোডশেডিং বা ভোল্টেজ ওঠানামা করে, তাহলে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করলে ব্লেন্ডার রক্ষা পাবে।
৬. ক্যাবল, প্লাগ ও বেস নিয়মিত পরীক্ষা করুন
প্লাগ বা কর্ডে কোনো ক্ষতি থাকলে তা অবিলম্বে ঠিক করুন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
৭. সার্বিক ওয়ারেন্টি ও স্পেয়ার পার্টস চেক করুন
অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি সহ ব্লেন্ডার কিনুন। জার, ব্লেড, গ্যাসকেট সহজে কিনে পাওয়া যায় কিনা দেখুন।
৮. ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়াল অনুসরণ করুন
আপনার ব্লেন্ডারের সঙ্গে আসা ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়ালটি পড়ুন এবং সব নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন। এটি ব্লেন্ডারের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে।
আরও জানতে পড়ুন: বাংলাদেশে সেরা ব্লেন্ডার তালিকা
শেষ কথা
ব্লেন্ডার পরিষ্কার রাখা কঠিন মনে হলেও কিছু সহজ হ্যাক এবং নিয়ম মেনে চললে এটি খুবই সহজ হয়ে যায়। গরম পানি, বেকিং সোডা, লেবু বা ভিনেগারের মতো ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে জার, ব্লেড, ঢাকনা সবকিছু ঝকঝকে রাখা সম্ভব।
প্লাস্টিক বা গ্লাস, যে কোনো ধরনের ব্লেন্ডারেই এই টিপস প্রযোজ্য। এই গাইড অনুসরণ করলে আপনার ব্লেন্ডার দীর্ঘস্থায়ী থাকবে, গন্ধ ও দাগ মুক্ত থাকবে। আশা করি এই গাইডে দেওয়া টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) — ব্লেন্ডার পরিষ্কার করার জন্য
প্রশ্ন ১: ব্লেন্ডার কত ঘন ঘন পরিষ্কার করা উচিত?
উত্তর: প্রতিবার ব্যবহার করার পরই জার, ব্লেড এবং ঢাকনা ধুয়ে রাখা সবচেয়ে ভালো। এতে দাগ, গন্ধ ও ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে না।
প্রশ্ন ২: ব্লেডে জেদি দাগ বা গন্ধ থাকলে কী করা উচিত?
উত্তর: ১ চামচ বেকিং সোডা + গরম পানি দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন। লেবুর রস বা ভিনেগারও গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৩: প্লাস্টিক জারের হলদে দাগ দূর করার সহজ উপায় কি?
উত্তর: বেকিং সোডা পেস্ট লাগিয়ে, টমেটো বা লেবুর রস দিয়ে মাখান এবং ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে রাখুন। এরপর ধুয়ে নিন।
প্রশ্ন ৪: গ্লাস জার নিরাপদে কীভাবে পরিষ্কার করবো?
উত্তর: গরম পানি এবং নরম স্পঞ্জ ব্যবহার করুন। ব্লেডে সরাসরি স্টিল উল ব্যবহার করবেন না।
প্রশ্ন ৫: ব্লেডে মরিচা উঠলে কী করতে হবে?
উত্তর: ১:১ অনুপাতে ভিনেগার এবং লবণ মিশিয়ে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
প্রশ্ন ৬: ঢাকনা ও রাবার গ্যাসকেট কীভাবে পরিষ্কার রাখবেন?
উত্তর: ছোট ব্রাশ দিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে ধুয়ে নিন এবং পুরোপুরি শুকিয়ে নিন। এতে ফাঙ্গাস বা ময়লা জমবে না।
প্রশ্ন ৭: ব্লেন্ডার পরিষ্কারের সময় কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
উত্তর: ফুটন্ত পানি ঢালবেন না, ব্লেডে সরাসরি স্টিল উল ব্যবহার করবেন না, মোটর বেস ভিজাবেন না, এবং জোরে জোরে স্ক্রাব করবেন না।




